৭ মার্চেই স্বাধীনতার কৌশলী ঘোষণা এসেছিল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চাতুর্যের সঙ্গে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে এক সেমিনারে মত প্রকাশ করা হয়েছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও এই বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে বলে জানান হয়েছে ওই সেমিনারে। আজ রাজধানীতে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ কমিটি এই সেমিনারের আয়োজন করে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রে্ক্ষিতে এই ভাষণ নিয়ে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

৭১ এর মার্চের উত্তাল সময়ে ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের দিকে চোখ ছিল গোটা দেশের। এই অঞ্চলের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই সমাবেশেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য বাঙালিদের প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

বিশ্বের ইতিহাসে যেসব ভাষণকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়, তার একটি ৭ মার্চের ভাষণ। স্বাধীনতার প্রায় চার যুগেও এই ভাষণের আবেদন কমেনি এতটুকু। এখনও জাতীয় দিবসে দেশজুড়ে বাজান হয় ভাষণটি। আর এবার জাতিসংঘের সংস্থার স্বীকৃতির পর ভাষণটি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আরও প্রচার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখন অনেকেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করে বলেন, এটি স্বাধীনতার ঘোষণা নয়। কিন্তু আমি দুটো তথ্য দিতে চাই। ৭ মার্চের ভাষণের পর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা একটি প্রতিবেদনে বলেছে, ‘চতুর শেখ মুজিব কৌশলে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গেছে। আর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাপ্তাহিক বিচিত্রায় জিয়াউর রহমান একটি নিবন্ধে লিখেছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে আমরা দিক-নির্দেশনা পেয়েছিলাম।’

মূল প্রবন্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন অর রশিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ একটি জাতি-জনগোষ্ঠীর মুক্তির কালজয়ী সৃষ্টি, এক মহাকাব্য। বহুমাত্রিকতায় তা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। শুধু বাঙালির জন্যই নয়, বিশ্ব মানবতার জন্যও অবিস্মরণীয়, অনুকরণীয় এক মহামূল্যবান দলিল বা সম্পদ। ইউনেস্কোর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে এটিই স্বীকৃত।’

‘গণতন্ত্র, উচ্চ মানবিকতা, ত্যাগ ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল আদর্শ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম, জাতিভেদ-বৈষম্য ও জাতি-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্ব মানবতার মুক্তির সংগ্রামে যুগে-যুগে এ ভাষণ অনুপ্রেরণা যোগাবে। সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে নবীন প্রজন্ম, রাজনৈতিক নেতৃত্ব রাষ্ট্র নায়ক, সমরকুশলী সবার জন্যই এ ভাষণে রয়েছে অনেক কিছু শিক্ষণীয়।’

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের রাজনৈতিক সাধনার ফসল। মন্ত্র মুগ্ধের মতো পুরো জাতি সে ভাষণ শুনেছিল। সেদিন বঙ্গবন্ধু জাতিকে তুমি বলে যেভাবে সম্বোধন করেছিলেন, তেমনি জাতিও বঙ্গবন্ধুকে সেভাবে গ্রহণ করেছিল।’

‘৭ মার্চের ভাষণ ছিল অসহযোগ আন্দোলনের ভাষণ। ভাষণে তিনটি অংশ ছিল। প্রথমটি পাকিস্তানের ২৪ বছরের ইতিহাস, দ্বিতীয়ত যে দিন তিনি ভাষণ দিচ্ছিলেন সেদিন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা এবং তৃতীয়টি করণীয়। একটি পূর্ণাঙ্গ ভাষণ তিনি (বঙ্গবন্ধু) সেদিন জাতির উদ্দেশ্যে দিয়েছিলেন।’

আমু বলেন, ‘প্রতিটি জিনিস বঙ্গবন্ধু করে রেখেছিলেন। হঠাৎ করে তিনি কোন বক্তব্য দিয়ে দেননি। হঠাৎ করে গেলাম আর ভারত আমাদের আশ্রয় দিয়ে দিল? অস্ত্র দিয়ে দিল? সব কিছু বঙ্গবন্ধু আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন।’

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। দলটির উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমীনের সঞ্চালনায় সেমিনার বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার রফিকুল ইসলাম, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর